জুমআর দিনের ফজিলত ও আমল সমূহ | Virtues and deeds of Jum’a day
জুম’আর দিনের ফজিলত (The virtues of Friday)
হযরত আনাস ইবনে মালিক ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন , জিবরাঈল ( আঃ ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – এর কাছে একটি সাদা আয়না নিয়ে এলেন । আয়নাটিতে একটি কালো বিন্দু ছিল । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , হে জিবরাঈল এই সাদা আয়নাটি কি ? জিবরাঈল ( আঃ ) বললেন , তা হল মুম’আ আর এই কালো বিন্দুটি হলো কিয়ামতের দিন – যা জুম’আর দিনে সংঘটিত হবে । এই দিনের মাধ্যমে আপনাকে এবং আপনার উম্মতকে পূর্ববর্তী উম্মতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে । কাজেই একই দিনে সকল মানুষ ( ইহুদী – খৃষ্টান ) আপনাদের অনুগামী হবে । এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোন মু’মিন আল্লাহর কাছে ভাল কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন । আর কোন অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলে আল্লাহ আশ্রয় দান করেন । জিবরাঈল ( আঃ ) বললেন , এই দিনটি আমাদের কাছে ইয়াওমুল মাযীদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , ইয়াওমুল মাযীল কি ? জিবরাঈল ( আঃ ) বললেন , আপনার রব জান্নাতুল ফেরদাউসে একটি প্রান্তর নির্ধারণ করেছেন । সেখানে মেশকের একটি ঢিলা রয়েছে । জুম’আর দিনে সেখানে নূরের মিম্বর স্থাপন করা হবে । নবীরা সেখানে উঠবেন । আর ইয়াকুত ও যবরঞ্জল পাথর খচিত মিম্বর স্থাপন করা হবে । সিদ্দীক , শহীদ ও নেককার লোকেরা সেখানে উঠবেন । আর আহলুল গুরাফ অর্থাৎ , সাধারণ জান্নাতীরা তাঁদের পেছনে সেই টিলায় বসবে । তারপর সকলে সম্মিলিত হয়ে আল্লাহর হামদ – ছানা করতে থাকবে । তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন , তোমরা আমার কাছে কী চাইবে – চাও । তারা বলবেন , আমরা আপনার রেজামন্দি চাই । আল্লাহ তাআলা বলবেন , আমি তোমাদের প্রতি খুশী হয়েছি , কাজেই তোমাদেরকে আমার ঘরে স্থান দিয়েছি এবং তোমাদেরকে মর্যাদা দিয়েছি । এরপর আল্লাহর নূরের ভাজাল্লী বিকশিত হবে । তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে । কাজেই এই দিনে তাদের সম্মান বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এর চেয়ে অধিক প্রিয় দিন তাদের কাছে কোনটাই হবে না । ( বারী মুসলিম , তিরমিহী , নাসাঈ , ইবনে মাযাহ )
অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় । আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাদের বলবেন , আমার বন্ধুদের খাবার পরিবেশন কর । তখন ফেরেশতারা বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসবে । তারা প্রতিটি লোকমায় নতুন নতুন স্বাদ উপভোগ করবে । খাবার শেষ হলে আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাদের বলবেন , আমার বান্দাদের পানীয় পান করাও । তখন পানীয় পরিবেশন করা হবে । যার প্রতি ঢোকে তারা অপূর্ব স্বাদ উপভোগ করবে । পানাহারের পর আল্লাহ তা’আলা বলবেন , আমি তোমাদের রব , আমার ওয়াদা আমি পূরণ করছি । কাজেই তোমরা যা চাইবে , তাই আমি দান করব । তারা দুইবার বা তিনবার বলবে , হে আমাদের প্রতিপালক , আমরা আপনার কাছে আপনার সন্তুষ্টি কামনা করছি । তখন আল্লাহ্ তা’আলা বলবেন , আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি । তোমাদের জন্য অতিরিক্ত পুরস্কার রয়েছে । আজ আমি তোমাদেরকে পূর্ববর্তী সকল মর্যাদা থেকে বড় মর্যাদা দান করব । তারপর পর্দা উন্মোচিত করা হবে । তখন তারা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তাকিয়ে থাকবে । তারপর সিজদায় লুটিয়ে পড়বে এবং আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী তারা সিজদায় পড়ে থাকবে । তারপর আল্লাহ্ তাদের বলবেন , তোমাদের মাথা তোল । এই স্থান ইবাদরে স্থান নয় । তখন তারা জান্নাতের সকল নিয়ামতের কথা ভুলে যাবে এবং আল্লাহর দীদার হবে তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় । যখন তারা ফিরে আসবে , তখন আরশের নিচ থেকে শুভ্র মেশকের এক টিলার উপর সুশীতল বাতাস বইতে থাকবে এবং মেসক উড়ে তাদের মাথায় ও তাদের ঘোড়ার ললাটে গিয়ে পড়বে । তারা ফিরে এলে তাদের স্ত্রীরা তাঁদেরকে পূর্বের চেয়ে অধিক সুন্দর ও সুশ্রী দেখে বলবে , আপনারা তো অধিক সুন্দর ও সুশ্রী হয়ে ফিরে এসেছেন ।
জুম’আর দিনের মর্যাদা (The dignity of Jum’a day)
হযরত আবু লুবাবা ইবনে আবদুল মুনযির (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুম’আর দিন সপ্তাহের সরদার। আল্লাহর কাছে সকল দিনের চেয়ে মর্যাদাবান । কোরবানির দিন ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান ।
জুম’আর জামাতে হাজির হওয়ার ফজিলত (The virtue of appearing in Jum’ar Jamaat)
হযরত আবু হুরায়রা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , যে লোক জুআর দিন ভালভাবে ওযূ করল , তারপর জুআর নামাযে আসল , খুতবা শুনল , নিকটবর্তী হলো ও নীরব থাকলো , আল্লাহ তার ঐ দিনের এবং বিগত জুম্মার মধ্যবর্তী এবং অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন । আর যে লোক কংকর নাড়াচাড়া করল , সে অনর্থ কাজ করল । আর যে অনর্থ কাজ করল , তার জুম্ম হলো না । ( মুসলিম , তিরমিযী , আবূ দাউদ , ইবনে মাজাহ্ মুসনাদে আহমদ )
জুমআ দু’আ কবুলের বিশেষ দিন হযরত আবু হুরায়রা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত । নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন সেটি যাতে সূর্য উদিত হয়েছে । সেটি হচ্ছে জুআর দিন । এদিনে আদম ( আঃ ) -কে সৃষ্টি করা হয়েছে । এদিনে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে জান্নাতে দিয়েছেন । এদিনে তাঁকে জান্নাত থেকে নামিয়ে দিয়েছেন । এদিনে কিয়ামত হবে । এদিনে এমন একটি সময় রয়েছে , যে সময়ে কোন মু’মিন কিছু চেয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা’আলা তাকে তা দিবেন । ( মুসলিম , তিরমিযী , নাসাঈ , আবূ দাউদ , মুসনাদে আহমদ মুয়াত্তা মালিক )
আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ( রাঃ ) বলেন , আমি সেই সময়টি চিনতে পেরেছি । তা হলো দিনের শেষ সময় । সে সময়েই আদম ( আঃ ) -কে সৃষ্টি করা হয়েছে ।
জুম’আর নামাযের ফজিলত (Virtue of gambling prayers)
হযরত ইবনে আওস ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেছেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিন জুমআর দিন । এদিন আদম ( আঃ ) -কে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এদিনই তাঁর রূহ কবয করা হয়েছে । এদিনে প্রথম শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে এবং এদিনেই মানুষ বেহুঁশ হয়ে পড়বে । কাজেই এই দিনে তোমরা আমার ওপর বেশী বেশী সালাত ও সালাম পেশ কর । কেননা তোমাদের সালাম আমার কাছে উপস্থাপন করা হয় । সাহাবীরা বললেন , হে আল্লাহ্র রাসূল ! আপনি মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর কিভাবে আপনার কাছে আমাদের সালাম পেশ করা হবে ? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , তোমরা কি ভাবছো আমি মাটির সাথে মিশে যাব ? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা নবীদের শরীর খাওয়া মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন । ( আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনে মাজাহ্ , মুসনাদে আহমদ , দারিমী ) অপর এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে । রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম – কে প্রশ্ন করা হলো যে আপনি ইন্তিকাল করার পর কিভাবে আমাদের দরূদ ও সালামের উত্তর দিবেন । রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন , নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা’আলা মাটির ওপর নবীদের শরীর খাওয়াকে হারাম করে দিয়েছেন । সুতরাং কেউ আমাকে সালাম দিলে আল্লাহ্ আমাকে আমার রূহ ফিরিয়ে দেন , আর আমি তার সালামের উত্তর দেই । ( আবু দাউদ , মুসনদে আহমদ )
জুম’আর পাঁচটি বৈশিষ্ট্য (Five features of Zoom’r)
আদম ( আঃ ) -কে এই দিনে সৃষ্টি করা হয়েছে । আল্লাহ্ তা’আলা আদম ( আঃ ) -কে দুনিয়াতে এই দিনে নামিয়ে দিয়েছেন । * আদম ( আঃ ) এই দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন । এমন একটি সময় রয়েছে এই দিনে যে সময়ে বান্দা হারাম ছাড়া যে কোন জিনিস প্রার্থনা করলে আল্লাহ্ তা দিয়ে দিবেন । * কিয়ামত সংঘটিত হবে এই দিনে । সুতরাং অসমান , যমীন ও আল্লাহর সকল নৈকট্যশীল ফেরেশতা জুম’আর দিনকে ভয় করে । ( ইবনে মাজাহ্ , মুসনাদে আহমদ )