Kufr, shirk, bidat and superstition
কতিপয় কুফ্রী ও তার বিবরণ (Some Kufr and its description)
যে সব বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে হয় , তার কোনটি অস্বীকার করা কুফ্রী । কুরআন – হাদীছের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয় অস্বীকার করা যেমন : নামায , রোযা ফরয হওয়াকে অস্বীকার করা , নামাযের সংখ্যা , রাকআতের সংখ্যা , রুকু – সাজদার অবস্থা , আযান , যাকাত , হজ্জ , ইত্যাদি বিষয়ের কোনটি অস্বীকার করা কুফ্রী । কেউ এসব বিষয় অস্বীকার করলে সে মুমিন মুসলমান থাকে না বরং কাফের হয়ে যায় ।
কুরআন হাদীছের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত কোন বিষয়ের এমন ব্যাখ্যা দেয়া , যা কুরআন ও হাদীছের স্পষ্ট বিবরণের খেলাফ — এটাও কুফরী । যেমন : কেউ যদি বলে জান্নাত – জাহান্নাম আছে বলে বিশ্বাস করি , কিন্তু জান্নাত অর্থ হল মনের খুশী আর জাহান্নাম অর্থ হল মনের যন্ত্রণা । এরূপ ব্যাখ্যা দেয়া কুফ্রী । কুফ্ফ ও ভিন্নধর্মের কোন শি’আর বা ধর্মীয় বিশেষ নিদর্শন গ্রহণ করা কুফ্রী , যেমন : হিন্দুদের ন্যায় পৈতা গলায় দেয়া , খৃষ্টানদের ক্রুশ গলায় ঝুলানো ইত্যাদি । কুরআনের কোন আয়াতকে অস্বীকার করা বা তার কোন নির্দেশ সম্পর্কে ঠাট্টা – বিদ্রূপ করা কুফরী ।
যেমন : নামায , রোযা , হজ্জ , যাকাত , পর্দা ইত্যাদি নিয়ে ঠাট্টা – বিদ্রূপ করা কুফ্রী । কুরআন শরীফকে নাপাক স্থানে ও ময়লা আবর্জনার মধ্যে নিক্ষেপ করা কুফরী । ইবাদত ও তাযীমের নিয়তে কবরকে চুমু দেয়া কুফ্রী । ইবাদতের নিয়ত ছাড়া চুমু দেয়া গোনাহে কবীরা । দ্বীন ও ধর্মের কোন বিষয় নিয়ে উপহাস ও ঠাট্টা – বিদ্রূপ করা কুফ্রী । এ জন্যেই নামায , রোযা নিয়ে উপহাস করা কুফ্রী । ইসলামের পর্দা ব্যবস্থাকে তিরস্কার করা বা উপহাস করা কুফরী । দাড়ি – টুপি , মাদ্রাসা মসজিদ নিয়ে উপহাস করা কুফরী ।
ইসলামের কোন বিষয়— তা যত সামান্যই হোক তা নিয়ে ঠাট্টা – বিদ্রূপ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায় । আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কোন হুকুমকে খারাপ মনে করা এবং তার দোষ – ত্রুটি অন্বেষণ করা কুফরী । * হারামকে হালাল মনে করা এবং হালালকে হারাম মনে করা কুফ্রী । নামায রোযা , হজ্জ , যাকাত , পর্দা করা ইত্যাদি ফরযসমূহকে ফরয তথা অত্যাবশ্যকীয় জরুরী মনে না করা এবং গান – বাদ্য , সুদ , ঘুষ ইত্যাদি হারাম সমূহকে হারাম মনে না করা এবং এগুলোকে মৌলভীদের বাড়াবাড়ি বলে আখ্যায়িত করা কুফ্রী ।
কেননা , কোন ফরযকে ফরয বলে অস্বীকার করা বা কোন হারামকে জায়েয মনে করা কুফরী । কারও মৃত্যুতে আল্লাহর উপর অভিযোগ আনা , আল্লাহ্কে যালেম সাব্যস্ত করা কুফরী । যেমন অনেক মা – বোন সন্তান মারা গেলে এরকম বলে উঠেন যে , ( নাউযু বিল্লাহ ! ) আল্লাহ আর কাউকে চোখে দেখল না , আমার বাচ্চাটাকে নিয়ে গেল ! ইত্যাদি । কাউকে কুফ্রী শিক্ষা দেয়া কুফ্রী । হারাম বস্তু পানাহারের সময় বিসমিল্লাহ বলা , যেনায় লিপ্ত হওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা কুফ্রী ।দ্বীনী ইলমের প্রতি তুচ্ছ – তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ও অবমাননাকর বক্তব্য প্রদান করা কুফরী । যেমন : এরূপ বলা যে , ( নাউযু বিল্লাহ ! ) মাদ্রাসায় পড়ে কী হবে ? এই ফকীরী বিদ্যা শিখে লাভ কী ? ইত্যাদি ।
এরূপ বলা কুফরী । হক্কানী উলামায়ে কেরামকে দ্বীনী ইল্মের ধারক – বাহক হওয়ার দরুন গালি দেয়া বা তুচ্ছ – তাচ্ছিল্য করা । এটাও কুফরী । কেউ প্রকাশ্যে কোন গোনাহ করে যদি বলে যে , আমি এর জন্য গর্বিত তাহলে সেটা কুফ্রী । আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করা , আল্লাহ ও নবীকে গালি দেয়া এবং তাঁদের শানে বে – আদবী করা কুফ্রী ।
যে যাদুর মধ্যে ঈমানের পরিপন্থী কুফর ও শিরকের কথাবার্তা বা কাজকর্ম থাকে তা কুফ্রী । গণতন্ত্র , সমাজতন্ত্র ইত্যাদি তন্ত্রমন্ত্রকে মুক্তির পথ মনে করা এবং একথা বলা যে , ইসলাম সেকেলে মতবাদ , এর দ্বারা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এই যুগে উন্নতি অগ্রগতি সম্ভব নয়— এটা কুফরী । ডারউইন – এর বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করা কুফী অর্থাৎ , একথা বিশ্বাস করা যে , বিবর্তন অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হতে হতে একপর্যায়ে বানর থেকে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে । এরূপ বিশ্বাস ইসলাম ও ঈমান পরিপন্থী । ইসলামী আকীদা – বিশ্বাসে আল্লাহ তা’আলা নিজ হাতে সর্বপ্রথম হযরত আদম ( আ . ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই মনুষ্য জাতির বিস্তৃতি ঘটেছে ।
কতিপয় শিরক (Some shirk)
কোন বুযুর্গ বা পীর সম্বন্ধে এই আকীদা রাখা যে , তিনি সব সময় আমাদের অবস্থা জানেন । তিনি সর্বত্র হাযির – নাযির । এরূপ ধারণা রাখা শিরক । কোন পীর – বুযুর্গকে দূর দেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে , তিনি জানতে পেরেছেন । এরূপ ধারণা রাখা শিরক । কেননা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ গায়েব জানে না । কোন পীর – বুযুর্গের কবরের নিকট সন্তান বা অন্য কোন উদ্দেশ্য চাওয়া শিরক ।
সন্তান দেয়ার মালিক আল্লাহ । আল্লাহ ব্যতীত আর কারও নিকটে সন্তান চাওয়া শিরক ।পীর বা পীরের কবরকে সাজদা করা শিরক । কোন বুযুর্গের নাম অর্থীফার মত জপ করা শিরক । কোন পীর – বুযুর্গের নামে শিন্নি , গরু , মুরগি , খাসি ইত্যাদি সদকা বা মান্নত মানা । অনেক মা – বোন বিভিন্ন মাযারে শিন্নি , গরু , মুরগি , খাসি ইত্যাদি মান্নত করে থাকে । এ থেকে বিরত থাকা উচিত । এরূপ মান্নত করে থাকলেও তা পূরণ করা যাবে না ।কোন পীর – বুযুর্গের নামে জানোয়ার যবেহ করা শিরক । কারও দোহাই দেয়া । যেমন কেউ বলল অমুক পীরের দোহাই । এরূপ দোহাই দেয়া শিরক । আল্লাহ ব্যতীত আর কারও নামের কছম খাওয়া বা কিরা করা শিরক ।
আলী বখশ , হোসাইন বখ্শ ইত্যাদি নাম রাখা শিরক । গ্রহ নক্ষত্রের তাছীর ( প্রভাব ) মানা বা তিথি পালন করা শিরক । জ্যোতির্বিদ , গণক , ঠাকুর বা যার ঘাড়ে জিন এসেছে তার নিকট হাত দেখিয়ে অদৃষ্ট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা । তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ও গায়েবী খবর বিশ্বাস করা । অনেকে মনে করে জিনরা গায়েব জানে । এ ধারণা ভুল । আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়েব জানে না ।
কোন জিনিস দেখে কুলক্ষণ ধরা বা কু – যাত্রা মনে করা , যেমন অনেকে যাত্রামুখে কেউ হাঁচি দিলে কু – যাত্রা মনে করে থাকে । বা যাত্রামুখে হোচট খেলে বা কাল হাড়ি দেখলে যাত্রা অশুভ মনে করে । এরূপ ধারণা রাখা শিরক । এরকম বলা যে , খোদা রাসূলের মর্জি থাকলে এই কাজ হবে বা খোদা – রাসূল যদি চায় তাহলে এই কাজ হবে । এভাবে আল্লাহর মর্জির সাথে রাসূলের মর্জিকে শামেল করা হয় বলে এ রকম বলা শিরুক ।
বরং বলতে হবে আল্লাহর মর্জি হলে এই কাজ হবে বা আল্লাহ চাইলে এ কাজ হবে । এরকম বলা যে , উপরে আল্লাহ নীচে আপনি ( বা অমুক ) । আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এরকম বলে থাকেন যে , উপরে আল্লাহ আর নীচে আপনি আছেন । এ রকম বলা দ্বারা কোন মানুষকে আল্লাহর সমপর্যায়ের সাব্যস্ত করা হয় । তাই এটা শিরকের পর্যায়ভুক্ত । ” কষ্ট না করলে কেষ্ট ( শ্রীকৃষ্ণ ) পাওয়া যায় না ” বলা শিরুক । কেননা , এতে করে হিন্দুদের দেবতা ( কেষ্ট বা শ্রীকৃষ্ণ ) কে স্বীকার করে নেয়া হয় ।
কতিপয় বিদআত (Some innovations)
” বিদআত ” অর্থ নতুন সৃষ্টি । শরীয়তের পরিভাষায় বিদআত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে কোন নতুন সৃষ্টিকে । যেমন : কোন বুযুর্গের মাযারে ধুমধামের সাথে মেলা মিলানো বিদআত । উরস করা বিদআত । অনেকে মনে করে ওরস করা ছওয়াবের কাজ । এজন্যেই অনেকে বলে থাকে “ ওরস মোবারক ” বা ” পবিত্র ওরস মোবারক ” । তারা ওরসকে পবিত্র এবং মোবারক অর্থাৎ , বরকতময় মনে করে ।
এটা ভুল ধারণা । হাদীছে ওরস সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা এসেছে । অতএব ওরস করা ছওয়াবের কাজ নয় বরং এটা বিদআত ও গোনাহের কাজ । অতএব কোন ওরস উপলক্ষ্যে টাকা – পয়সা দেয়াও গোনাহের কাজ । মৃতের কুলখানা করা ( অর্থাৎ , চতুর্থ দিনে ভালে ছওয়াব করা ) বা মৃতের চেহলাম বা চল্লিশা করা বিদআত । কারও মৃত্যুর ঠিক চার দিন পর তার জন্য দুআ বা ঈছালে ছওয়াব করাকে সাধারণতঃ কুলখানী বলা হয় । আর চল্লিশ দিন পর তার জন্য দুআ ও ঈছালে ছওয়াবকে বলা হয় চল্লিশা । শরীয়তে কুলখানী ও চল্লিশা পালন করারও কোন ভিত্তি নেই ।
অতএব কুলখানী বা চল্লিশা করা বেদআত । অনেকে মনে করেন বাপ – দাদারা চিরকাল এগুলো করে আসছেন , এখন কেন করা যাবে না এ ধারণা ঠিক নয় । তারা ভালভাবে মাসআলা না জানার কারণে করে থাকলেও আমাদের তা করতে হবে , এ যুক্তি ঠিক নয় । তারা ভালভাবে মাসআলা না জানার কারণে করে থাকলে হয়তো আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন , কিন্তু আমরা জানার পরেও জিদবশতঃ করলে তা ক্ষমা পাওয়া কঠিন হতে পারে জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা বিদআত । শরীয়তে মৃত্যুবার্ষিকী বলেও কিছু নেই , জন্মবার্ষিকী বলেও কিছু নেই ।
অতএব জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা বিদআত এবং গোনাহের কাজ । কবরের উপর চাদর দেয়া বিদআত । কবরের উপর ফুল দেয়া বিদআত । কবর পাকা করা বিদআত । কবরের উপর গম্বুজ বানানো বিদআত । মাযারে চাদর , শামিয়ানা , মিঠাই ইত্যাদি নযরানা দেয়া বিদআত ।প্রচলিত মীলাদ অনুষ্ঠান বিদআত । কোন কোন স্থানে অনেক মা – বোনেরাও মীলাদ পাঠ করা শুরু করেছেন বলে শোনা যায় ।
এটা বর্জন করা চাই । মীলাদ অনুষ্ঠানে কেয়াম করা বিদআত । এক শ্রেণীর লোক আছেন যারা বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানেন অর্থাৎ , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্যের কথা জানেন । তাই তারা বলতে চান মীলাদের ভিতর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারণ হয় , যখন দুরূদ শরীফ পড়া হয় , তখন কেয়াম করতে হবে অর্থাৎ দাঁড়াতে হবে , কারণ , রাসূলের নামে দুরূদ পড়া হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারেন এবং তিনি সেই মজলিসে হাজির হয়ে যান , তাই তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়াতে হবে । হক্কানী উলামায়ে কেরাম বলেন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানেন না , তাই তাঁর নামে দুরূদ পড়া হলে তিনি জানবেন কী করে ? কোন মানুষ গায়েব জানে না , গায়েব জানেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা । তবে আল্লাহ তাঁর কোন খাস বান্দাকে গায়েবের অর্থাৎ , অদৃশ্য বিষয়ে জানাতেও পারেন ।
কিন্তু মীলাদের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – কে জানানো হয় এবং তিনি হাজির হয়ে যান এমন কোন দলীল নেই বরং এমন দলীল রয়েছে , যাতে বোঝা যায় তিনি হাজির হন না । হাদীছে পরিষ্কার আছে । তোমরা আমার প্রতি দুরূদ পাঠ কর । তোমরা যেখানেই থাক না কেন তোমাদের সে দুরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হবে । অন্য এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে এক দল ফেরেশতা নিযুক্ত আছেন যারা সারা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করেন । আমার উম্মতের পক্ষ থেকে দুরূদ সালাম যা পাঠ করা হয় তারা সেগুলো আমার কাছে পৌঁছে দেন । লক্ষ্য করুন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন তাঁর কাছে দুরূদ সালাম পৌঁছে দেয়া হয় , তিনি হাজির হন না ।
সারকথা , দুরূদ পাঠ করা হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজির হন এই বিশ্বাসে মীলাদে কেয়াম করা ভিত্তিহীন ।ঈদের নামাযের পর মুসাফাহা ও মুআনাকা বা কোলাকুলি করা বিদআত । বাচ্চাদের বোঝানো উচিত যে , তোমরা ঈদের দিন কোলাকুলি করবে না । তাহলে ছোট থেকেই বাচ্চারা এটা শিখে যাবে । আযানের পর হাত উঠিয়ে দুআ করা বিদআত । আযানের পর যে দুআ রয়েছে , তা পাঠ করা সুন্নাত । তবে হাত না উঠিয়েই সে দুআ পাঠ করতে হবে । আযান – ইকামতের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম এলে বৃদ্ধ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানো বিদআত । কেউ কেউ মনে করে এর দ্বারা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায় । এটা কোন সহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয় । ” আমীন ” বলে মুনাজাত শেষ করা নিয়ম , অনেকে কালিমায়ে তাইয়্যেবা বলতে বলতে মুখে হাত বুলান এবং মুনাজাত শেষ করেন — এটা কুরআন – সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয় , এটা বিদআত ।
কতিপয় রসম বা কুসংস্কার ও কুপ্রথা (Some rituals or superstitions and evil practices)
বিধবা বিবাহকে দূষণীয় মনে করা । অনেক মহিলা বয়স এবং প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও এবং বিবাহ বসতে কোন অসুবিধা না থাকা সত্ত্বেও মানুষে কী মনে করবে এই চিন্তা করে বিবাহ বসে না । এটা ঠিক নয় । প্রয়োজন বোধ করলে বিবাহ বসা উচিত । নতুবা যেনা ইত্যাদি গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । বিবাহের সময় সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও সমস্ত দেশাচার পালন করা এবং অযথা অপব্যয় করা ।
নছব বা বংশের গৌরব করা । কোন হালাল পেশাকে অপমানের মনে করা । যেমন : দপ্তরীর কাজ করা , মাঝিগিরি বা দর্জিগিরি করা , তৈল – লবণের দোকান করা ইত্যাদি । বিবাহ শাদিতে হিন্দুদের রছম পালন করা যেমন ফুল – কুলা দ্বারা বউ বরণ করা , ভরা মজলিসে বউ – এর মুখ দেখানো , গীত গেয়ে স্ত্রী – পুরুষ একত্রিত হয়ে বর – কনেকে গোসল দেয়া ইত্যাদি । মহিলাগণই এ গোনাহে বেশী জড়িত হয়ে থাকেন ।
এ থেকে বিরত হওয়া চাই ।মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় – চোপড়কে দূষণীয় মনে করা । এই চিন্তা থেকেই অনেকে মৃত ব্যক্তির কাপড় – চোপড় অন্য লোকদের দিয়ে দেয় । মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড় – চোপড়কে দোষণীয় মনে করে তা অন্যকে দিয়ে দেয়া ঠিক নয় । তবে হ্যাঁ , এরূপ দূষণীয় মনে না করে ছওয়াবের নিয়তে দান করে দেয়াতে কোন অসুবিধা নেই । সেটাও ওয়ারিছদের অনুমতিক্রমে হতে হবে । কেননা , ওয়ারিছগণই উক্ত কাপড় – চোপড়ের মালিক । তাই তাদের অনুমতি ব্যতীত তা দান করে দেয়া যাবে না ।
বিনা প্রয়োজনে শখবশতঃ কুকুর পালন করা নিষিদ্ধ । তবে শিকার ও পাহারার প্রয়োজনে কুকুর পালন করা বৈধ । বিবাহ – শাদি , খত্না ইত্যাদিতে হাদিয়া – উপঢৌকন দেয়া একটা রছমে পরিণত হয়েছে । সাধারণতঃ এসব উপঢৌকন প্রদানের পশ্চাতে ভাল নিয়ত থাকে না বরং খারাপ নিয়ত থাকে । যেমন কেউ কেউ এরকম চিন্তা থেকে দেয় যে , না দিলে অসম্মান হয় বা দুর্নাম হয় । কিংবা এরূপ চিন্তা করে যে , অমুক অনুষ্ঠানে তারা দিয়েছিল এখন আমরা না দিলে কেমন হয় , তাই দিতে হয় ইত্যাদি উদ্দেশ্যে মানুষ দিয়ে থাকে ।
বিবাহ – শাদিতে পদে পদে শত শত রছম ও কুসংস্কার পালিত হয় , এগুলো বর্জনীয় । প্রত্যেকটা পদে পদে শরীয়তের তরীকা কী তা জেনে বাকি সব পরিত্যাগ করা উচিত । শবে বরাতে হালুয়া – রুটি করা , পটকা ফুটানো , আতশবাজি করা । মোমবাতি জ্বালানো । এগুলো রছমে পরিণত হয়েছে । তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরী । একথা মনে করা যাবে না যে , ছোট বাচ্চারা মোমবাতি জ্বালাচ্ছে , ছোট বাচ্চারা পটকা ফোটাচ্ছে তাতে আর এমন কী ক্ষতি ? কিন্তু করছে তো অন্যায় কাজ । আমরা গার্জিয়ানরা টাকা – পয়সা দিচ্ছি , সমর্থন করছি , আমাদের সহযোগিতায় হচ্ছে , কাজেই আমরাও ঐ পাপে শরীক হয়ে যাচ্ছি ।
আমরা যদি এটার সমর্থন দেই , কিংবা তাতে বাধা না দেই , তাহলে ওরা শিখবে যে , এগুলো করতে হয় । এভাবে একটা অন্যায় জিনিস ছোটদের শিক্ষা দেয়া হল । এভাবে আমাদের ছোট সন্তান , আমাদের ছোট ভাই , আমাদের আপনজনকে আমরা অন্যায় কাজ শিক্ষা দিলাম । অন্যায় কাজ শিক্ষা দেয়াটাও পাপ । শবে বরাত একটা বিশেষ মর্যাদার রাত । কাজেই এ রাতে গোনাহ করা হলে সেটা বেশী বড় গোনাহ হয়ে দাঁড়াবে ।
আশুরায় খিচুড়ি ও শরবত তৈরি এবং বণ্টন করা । শাব্দিক অর্থে “ ঈদ মুবারক ” বলা খারাপ ছিল না , কিন্তু এটা রছমে পরিণত হয়েছে বিধায় পরিত্যাগ করাই শ্রেয় । মসজিদ , মাদ্রাসা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য বা ধর্মীয় অন্য কোন কাজের জন্য মজলিসের মধ্যে এমনভাবে চাঁদা আদায় ও দান কালেকশন করা যে , মানুষ শরমে পড়ে বা চাপের মুখে পীড়াপীড়ির কারণে দান করে ।
এভাবে কালেকশন করা ঠিক নয় । বিপদ – আপদে যে কোন দান – সদকা করলে বিপদ দুরীভূত হয় , কিন্তু গরু , ছাগল , মোরগ প্রভৃতি কোন প্রাণীই যবাই করতে হবে— যেমন বলাও হয় জানের বদলে জান— এটা একটা রছম । জানের বদলে জান হওয়া জরুরী নয় বরং যে কোন সদকা হলেই তা বিপদ দুরীভূত হওয়ার সহায়ক । মাইয়েতের জন্য ঈছালে ছওয়াব করা , দুআ করা শরীয়তসম্মত বিষয় , কিন্তু সেটা সম্মিলিত হয়েই করতে হবে এরূপ বাধ্যবাধকতার পেছনে পড়াও রছমে পরিণত হয়েছে । যেমন : আমরা ধরে নিয়েছি কেউ মারা গেলে হুজুরদের ডেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করাতে হয় নতুবা কর্তব্য পালন করা হল না । এ ধারণা ঠিক নয় । নিজেরাও একাকী দুআ করা যেতে পারে ।